
প্রকাশিত: Fri, Mar 24, 2023 10:36 PM আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 5:25 PM
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং মাহিয়া মাহি
কাজী এম মুর্শেদ : মাহিয়া মাহি ইস্যু, কোথায় সেইমসাইড হলো কিংবা কার হাতের ইশারায় পুরো নাটকের সমাপ্তি হলো, এই প্রশ্ন থেকেই যাবে। এটা যে কোনো সহজ বিষয় বা আইনের নিজস্ব গতি, সেটা মনে হয় না। কারও হাত আছে পরের বিষয়ে, মাঝখানে পুলিশ বাহিনীর অতি উৎসাহ এবং নৈতিক পরাজয় মনে থাকবে। এক লাইভে সৌদি আরব থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদগার, ফলাফল সেই ব্রক্ষ্মাস্ত্র ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। এই আইনে মামলা করে বসে ছিলো পুলিশ বাহিনী, তারা জানে আইনের ফাঁক কোথায়। সোজা লাল দালানে পাঠানো যাবে, জামিন বাতিল করা যাবে এবং ইনডেমনিটি তো আছেই। যেই মামলা করুক, তার কোনো দোষ নেই, সেটা ভুয়া মামলা হলেও কোনো শাস্তি নেই। দুপুর সাড়ে বারোটায় বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার, দুপুর দুইটার পর রিমান্ড বাতিল ও জামিন বাতিল করে জেলে প্রেরণ। বিকাল ৪ টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা। বিকাল ৬টায় জামিন আবেদন, এরপরপরই কারাগার থেকে মুক্তি।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিবর্তনমূলক আইন। এই আইনের কিছু ধারা বদলানোর দরকার নেই, পুরো আইন বাতিল করা উচিত। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, দেশের মালিক জনগণ, আইন জনগণের জন্য হয় যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার দিতে রাষ্ট্র বাধ্য। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অনেক ধারাই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ২৬ ধারায় বলা আছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যেকোনো আইন বাতিলযোগ্য। এই এক কারণেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং প্রস্তাবিত ডেটা প্রটেকশন আইন থাকতে পারে না, পাস হতেও পারে না। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠভোট দিয়ে আইন পাস করা যায়, কিন্তু আমাদের ডজন ডজন ব্যারিস্টার কোনো রিট করে না, আদালত স্বপ্রণোদিত হয়েও কোনো কথা বলেন না। আইন নিজস্ব গতিতে চলে না, বরং আইনকে চালানো হয়, সেটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। মামলা হলেই তাকে এমনভাবে গ্রেফতার করা অসম্মানের, তার উপরে যদি নারী হয় এবং নয় মাসের অন্তসত্বা। একইভাবে পুলিশ বাহিনী গত বার পরীমনির সঙ্গেও একই আচরণ করে। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা থানায় বসে আড্ডা দেন যাঁদের আইনের লোকেরা খুঁজছে, এমন রিপোর্ট জনকণ্ঠে আসছিলো।
মাহিয়া মাহিকে আমি সেলিব্রিটি ধরি না, তার একমাত্র এচিভমেন্ট ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, সেই ছবিও দেখেছেন। একজন নারীকে কীভাবে অসম্মান করা হয় সেটা আবারও দেখা লাগালো। পরীমনির সেই জেল থানায় মেহেদি দিয়ে হাতে কি লিখেছিলেন মনে আছে নিশ্চয়ই, সেটা স্যালুটও দিয়ে দেখিয়েছিলো। সন্ধ্যা ছয়টায় জামিন এবং আধ ঘণ্টায় মুক্তি, চিন্তা করতে পারেন কোর্টের আদেশ এতো কম সময়ে পৌঁছায় ও মুক্তি পায়? ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলায় জামিন না হতে হতে মুশতাক জেলে মারা গেলো। অনেক হাজতির কয়েকদিন লাগে কোর্ট আদেশ পৌছাতে। ভুল হয় সেজন্য হাজতি ছাড়া পায় না। সেখানে ৩০ মিনিটে কার সেই হাত আছে যা মুক্ত করে দিলো? মাহিয়া মাহিকে সেলিব্রিটি ধরি না, তবে তার সঙ্গে যাঁদের পরিচয় তারা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক সেলিব্রিটি। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
থানা, মামলা, জেল সবই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। তবে জামিন, রিমান্ড, আদালত, মেজিস্ট্রেট, সবই আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন। আমি একদমই আশ্বস্ত হচ্ছি না, আইন নিজের গতিতে চলেছে। এখানে বড় নেতা মন্ত্রীদের ঠাণ্ডা যুদ্ধ হয়ে গেছে, একপক্ষ জিতে গেছে অন্যপক্ষ হেরে গেছে। কে জিতলো কে হারলো সেটা ব্যাপার না। ব্যাপার হলো পুলিশ বাহিনী ডিজিটাল আইনের সুবিধা নিতে গিয়ে এই দফা পরাজিত হলো। এই কারণে মাহিয়া মাহিকে একবারের জন্যও সেলিব্রিটি মানতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন যে নিবর্তনমূলক আইন, এটা হ্যারাসমেন্টের জন্য, এটা আমাদের তৈলাক্ত সাংবাদিকরাও মানেন। আমাদের আইনমন্ত্রী বারবার বলেন, এই আইনের দরকার আছে। কারণ এতে সাইবার সিকিউরিটির প্রশ্ন জড়িত। সম্মানের সঙ্গে দুইটা প্রশ্ন করি।
[১] ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বারবার ব্যবহার হয়েছে নিবর্তনের জন্য। সাইবার সিকিউরিটির জন্য এই সাড়ে চার বছরে ঠিক কয়টা মামলা হয়েছে? [২] সাইবার সিকিউরিটি অনেকবারই লংঘন হয়েছে, সরকারের কারিগরি সেই প্রশিক্ষণ বা জ্ঞান নাই যে তারা বুঝতে বা ধরতে পেরেছে কোনটা সাইবার সিকিউরিটি লংঘিত হয়েছে। বরং প্রতিবারই মিলিয়ন ডলার করে চুরি হয়েছে, সাইবার টিম হাতে চুড়ি পরে বসে ছিলো। আইনমন্ত্রীর কথা পুরো অস্বীকার করতে পারি না, সাইবার সিকিউরিটির এবং অন্যান্য কারণে করা। সেই অন্যান্যতেই জনগণকে নিবর্তন বছরের পর বছর হয়েছে। সরকারের উচিত সংবিধান সম্মান করে জনগণের মৌলিক অধিকার স্বীকার করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা, সঙ্গে সম্ভাব্য ডেটা প্রটেকশন আইন যা কে নো সংরক্ষণের জন্য না, পুরোই নিয়ন্ত্রণের জন্য, সেটা বাদ দেওয়া উচিত। আমি আন্দোলন করি না, দাবিও করি না, করে লাভ হয় না। আমি শুধু যুক্তি দিয়ে বলছি এবং জানতে চাইছি, একটা প্রমাণ দিন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে কোন সাইবার ক্রাইমের মামলা এখনো হয়েছে। পুনশ্চঃ মাহিয়া মাহি দেশে ফিরছিলেন, পুলিশের নাটকটা মানা যেতো যদি মাহিয়া মাহি সেই পাপিয়াদের মতো দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করতো। সেটাও হয়নি। লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
